তখন দেখিল কন্যা স্বপ্নের

তখন দেখিল কন্যা স্বপ্নের মঝার। দিবাকর ঝলকয়ে ক্রোড়েতে তাহার।। বাক্য বাদী হৈয়ে বলে তাহার সাক্ষাৎ। তুমিহ গমন কর সিদ্ধের পশ্চাৎ।। যেন কৈরাছিল তব ধর্ম অবলম্বন। মনসাধে তার ধর্ম করহ গ্রহণ।। যেন তার পন্থে ছিলি ধর্মের তস্করা। তার ভাবে হৈতে হবে আপ্ত ধর্ম হারা।। তাহার ভাবেতে তুমি দিতে হবে প্রাণ। মারিলে মরিতে হয়ে শাস্ত্রের প্রমাণ।। তবে […]

তখন দেখিল কন্যা স্বপ্নের মঝার।
দিবাকর ঝলকয়ে ক্রোড়েতে তাহার।।
বাক্য বাদী হৈয়ে বলে তাহার সাক্ষাৎ।
তুমিহ গমন কর সিদ্ধের পশ্চাৎ।।
যেন কৈরাছিল তব ধর্ম অবলম্বন।
মনসাধে তার ধর্ম করহ গ্রহণ।।
যেন তার পন্থে ছিলি ধর্মের তস্করা।
তার ভাবে হৈতে হবে আপ্ত ধর্ম হারা।।
তাহার ভাবেতে তুমি দিতে হবে প্রাণ।
মারিলে মরিতে হয়ে শাস্ত্রের প্রমাণ।।
তবে কন্যা স্বপ্ন থাকি হৈল সচকিত।
জ্যোতি রবি হৃদাকাশে হৈল উদিত।।

লাগিল হৃদেরি গৃহে প্রেমেরি অনল।
পলে পলে সে অনল হৈল প্রবল।।
পড়িল তাহার পন্থে বিষম সঙ্কট।
বসিল হৃদেরি পাটে প্রসিদ্ধ সুপট।।
আপন সাক্ষাতে হেরে চমৎকার দেশ।
নিতান্ত অক্ষম তাতে করিতে প্রবেশ।।
কিঞ্চিৎ বাখান তার করিতে বর্ণন।
এই ভবে নাহি কার শক্তি কদাচন।।
প্রেম দুঃখে দুঃখময় নয়ন সজলা।
সিদ্ধ পাছে পাছে যায় হৈয়ে চপলা।।
বলে প্রভু দয়াময় কৃপার সাগর।
নিজের কার্যেতে আমি সতত কাতর।।
পন্থ ভ্রম করিয়াছি তব প্রিয়তমে।
কৈরাছি কৈরাছি সব বিনা অবগমে।।
না জানি কৈরাছি দোষ কর ক্ষমা দান।
বিতরণ কর এবে ধর্ম পরিজ্ঞান।।
গ্রহণ করিনু এবে মুহাম্মদী ধর্ম।
মম অধর্মতা মল কর পরিকর্ম।।
অন্তঃ প্রাজ্ঞ হৈল তবে সিদ্ধ মহাজন।
মুহাম্মদী ধর্ম কন্যা কৈরাছে গ্রহণ।।
অন্তরঙ্গ হৈয়াছে নাই কিছু ভিন।
ধর্ম প্রাপ্তে পরিষ্কৃতা নাহিক মলিন।।
ফিরি গিয়ে মিল পুনঃ কন্যার সহিত।
মর্মান্তিক হও দোহ যেমত উচিত।।
এসব বৃত্তান্ত সিদ্ধ করিয়ে জ্ঞাপন।
ইচ্ছিল রুমেতে পুনঃ করিতে গমন।।
শিষ্যগণ অভ্যন্তরে পৈল কোলাহল।
প্রেমানল পুনঃ বুঝি হৈল প্রবল।।
সবে বলে পুনঃ কিসে হৈলা উন্মাদ।
মন শান্ত করি কিসে ঘটাও প্রমাদ।।
অধর্মতা ত্যাজি ধর্ম করিয়ে গ্রহণ।
পুনঃ অধর্মতা গ্রহ কিসের কারণ।।
তবে সিদ্ধ শিষ্যগণে কন্যা বিবরণ।
খণ্ড খণ্ড সুপ্রচণ্ড করিল বর্ণন।।
স্তব্ধজ্ঞান হৈল সব করিয়ে শ্রবণ।
পুনঃ সব মিলি রুমে করিল গমন।।
উপস্থিত হৈল যবে রুম অভ্যন্তর।
পাইল কন্যাকে দুঃখে অতিশ কাতর।।
জর্জ্জিত ক্ষীণ তনু ধূলীময় কেশ।
উলঙ্গ বদনা তাতে ভাঙ্গা পরিবেশ।।
সিদ্ধকে দেখিয়া কন্যা হৈল মোহিত।
কন্যাকে হেরিয়া সিদ্ধ অতিশ রোদিত।।
পড়িল কাঁদিয়ে অতি প্রসিদ্ধের পায়।
না বুঝিয়ে এতো দুঃখ দিয়াছি তোমায়।।
কাঁদিয়ে তোমায়ে আদ্যে কাঁদিনু এখন।
মারিলে মরিতে হয়ে শাস্ত্রের বচন।।
হৈয়াছি এখন আমি তব আজ্ঞাধীন।
কাট মার যাহা কর না হৈব ভিন।।
পড়াও ধর্মের কলমা করিব গ্রহণ।
না করিব পুনঃ কোন ধর্মেতে মনন।।
তবে সিদ্ধ ধর্ম কলমা পড়াল তাহায়।
সুখের তরঙ্গ পৈল শিষ্যের সভায়।।
আচম্বিৎ পেল যবে ধর্ম রবি জ্যোতি।
তাহার তরঙ্গে হৈল অতি ছন্ন মতি।।
প্রভু প্রেম মনান্তরে হৈল প্রবল।
এভব জীবন হৈল যেমন হলাহল।।
প্রভুর কৃপায়ে প্রেম সুরা করি পান।
সমর্পিল নিমিষেতে নিজ মিষ্ট প্রাণ।।
উড়িল ত্যাজিয়ে পাখি দেহের পিঞ্জর।
মনের আচ্ছন্নে লুপ্ত হৈল ভাস্কর।।
কলেবর পাত্রে ছিল এক ভিন্ন বিন্দু।
আকর্ষিয়ে লিল কৃপা তার মূল সিন্ধু।।
ভব থেকে বায়ু প্রায় যাইবে সকল।
নীরধিতে নীর যেতে কিসের কল্কল।।
এইরূপ প্রেম পন্থে হয়ে কত কর্ম।
প্রেমিক বিহীনে কিন্তু না বুঝয়ে মর্ম।।
সংযুক্ত আছয়ে সদা ভয় আর আশ।
এ দোহ মাঝারে নিত্য প্রেমিকের বাস।।
কিন্তু এইসব মর্ম এ সব কথন।
না পারয়ে আত্মা শত্রু করিতে শ্রবণ।।
অস্ত গেল কন্যা প্রাণ রবি যেইক্ষণ।
ব্যাকুলিত হৈল অতি সিদ্ধ মহাজন।।
বলিতে লাগিল তবে সবার সাক্ষাৎ।
আমিহ যাইব এবে তাহার পশ্চাৎ।।
এই ভব ত্যাজি যাব স্বর্গ নিকেতনে।
দুইজন মিশি এক হব সুদর্শনে।।
এই মত ব্যাকুলিত পোহাইল নিশি।
অরুণ উদিত হৈল লুকি গেল শশী।।
ফুঁকিল প্রেমাধিকারে প্রেম মহামন্ত্র।
মিশাতে দু’জনে বাজাইয়ে প্রেম যন্ত্র।।
শুনিয়ে যন্ত্রের ধ্বনি হৈয়ে হরষিত।
শুয়া উড়ে গেল খোপ হৈল শূন্য চিৎ।।
প্রিয়সী প্রেমিক দুইজন সেই ঠাম।
প্রাণে প্রাণে মিশাইয়ে করিল বিশ্রাম।।
রুম আর পবিত্র মক্কার মধ্যস্থান।
দোহ নিদ্রালয় যেন মনোরমুদ্যান।।
স্বর্গের উদ্যান প্রায় সতত বসন্ত।
দুইজন নিত্য প্রেম রঙ্গে বটে শান্ত।।
মাত্র গল্প না জানিবে মকবুল বচন।
শব্দ লক্ষে অর্থপুরে করিবে মর্মন।।
নিশ্চয় পাইবে তবে মম সার মর্ম।
নতু মুঢ়ে কত হিংসে না বুঝিয়ে ধর্ম।।

লেখক: আবদুল গণি কাঞ্চনপুরী

error:

তখন দেখিল কন্যা স্বপ্নের