ছোনাআন দেশে ছিল প্রসিদ্ধ সুজন।
পবিত্র কাবার ঘরে তাঁহার আসন।।
কাবার ঘরেতে ছিল পঞ্চাশ বৎসর।
চারি শত সাধু শিষ্য তার সহচর।।
মুহাম্মদী ধর্মে ছিল অতি জ্ঞানবান।
কেহ না আছিল তবে তাঁহার সমান।।
সত্ত্বা গুণে কি কহিব কেমন নিপুণ।
সাধুত্যা গুণেতে কিছু না আছিল উন।।
একদা স্বপ্নেতে দেখে সেই জ্ঞানবান।
কাবা বাহিরে এক মনোরম স্থান।।
সেই স্থানে কোন এক প্রতিমা গোচরে।
ভক্তিরূপে প্রণিপাত করে নম্র শিরে।।
স্বপ্ন দেখি নিদ্রা থাকি হৈয়ে জাগরিত।
স্বপ্ন মর্ম বুঝি মনে হৈল ভাবিত।।
মম ধর্ম পন্থে বুঝি পড়িল সঙ্কট।
না জানি কিরূপে হবে সুরক্ষা প্রকট।।
সহজে ত্যাজন যায় জীবনের ধন।
হারিতে সঙ্কট অতি সুধর্ম রতন।।
সকলের পন্থে আছে এমত সঙ্কট।
সঙ্কট রক্ষাতে পন্থ হৈবে প্রকট।।
আটকিয়া থাকে যেই সে বিপদ স্থানে।
ধূলী পড়ি যায় তার মুক্তির দর্পণে।।
কতদিন পরে সে মহৎ সুজন।
গমন করিল রুমে লিয়ে শিষ্যগণ।।
পন্থে যেতে হেরি এক ঈসায়ী কুমারী।
মন প্রাণে সাধে হৈল রূপের ভিখারী।।
রূপরাশি চক্রে যেন অরুণ উদিত।
হেরিতে যাহার জ্যোতি জ্ঞান অন্তহিত।।
তাঁহার চিকুরে মন বান্ধে যেই জন।
কচ ধ্যানে হয়ে পৈতা কণ্ঠার ভূষণ।।
কটাক্ষের শরে যারে হানয়ে হৃদয়।
বংশী প্রায়ে তাঁর বক্ষ হয়ে ছিদ্রময়।।
অধরের সুধা আশে ভুবন তৃষিত।
কিন্তু কটাক্ষের শরে সদায়ে ত্রাসিত।।
ওষ্ঠ জীব জল কূপ প্রেমিক কারণ।
ঈসা নবী প্রায় তাঁর সুরস কথন।।
অরুণ বদনে ছিল কিরণ মুখশ।
নেত্র জ্যোতি হ্রাস ভয়ে হেরিতে কর্কশ।।
হেরিতে নির্মল রূপে লাগিল অনল।
কন্যা প্রেম সিদ্ধ মনে হৈল প্রবল।।
দৃষ্টিপাত করিতে সে কুন্তলের পানে।
অধর্মতা মসী পৈল সুধর্ম দর্পণে।।
ধর্ম ত্যাজি অধর্মতা করিল গ্রহণ।
জীবনে খেলিতে হৈল প্রেমের কারণ।।
খিড়কি আচ্ছান্নে হেরি অরুণ ঝলক।
কুমুদের প্রায়ে হৈল অরুণ সেবক।।
শয়ন ভোজন সব হৈল রহিত।
প্রিয়সীর রূপ ধ্যানে সদায়ে রোদিত।।
মনেতে করিত যবে সেইরূপ ধ্যান।
হৈত আপন হারা অন্তহিত জ্ঞান।।
জ্ঞান বুদ্ধি যত ছিল হারিল সকল।
মাত্র প্রিয়সীর প্রেম হৈল প্রবল।।
মোহিনীর মূর্তি হৃদে হৈল প্রকাশিত।
কাবাকে ত্যাজিয়া হৈল মন্দির বাসিত।।
দিবস যামিনী যায়ে তাঁর এই রূপ।
রূপসীর রূপ ধ্যানে থাকে সদা চুপ।।
প্রেমের বিষম জ্বালা দহি মনান্তর।
প্রিয়সীর পন্থে গিয়ে বসিল সত্বর।।
দরশন আশে সেই রূপের মুকুর।
মন সাধে হৈল সেই গলির কুকুর।।
সেই পন্থ ধূলা শয্যা রহে অনুদিন।
পূর্ণিমার তনু তার হৈল নবীন।।
কতদিন গত হৈল যবে এই মত।
তার মনস্তাপে কন্যা হৈল অবগত।।
একদিন সেই রূপবতী ছদ্মবেশে।
উপস্থিত হৈল এসে ছোনাআনী পাশে।।
বলে কোথা শুনিয়াছ তোমা হেন ঋষি।
থাকিতে ঈসাই পন্থে এই রূপে বসি।।
যার কণ্ঠে পড়ে মম চিকুরের ফাঁদ।
থাকিতে হৈবে তার সর্বদা উন্মাদ।।
সিদ্ধ বলে তুমি আমা পাইয়ে সরল।
মন প্রাণ জ্ঞান বুদ্ধি লুটিছ সকল।।
তোমায়ে ছাড়িয়ে কোথা যাইব এখন।
নতু ফিরি দেও মম হারা মন ধন।।
ঠমক কৈরনা এতো তুমি নানা রঙ্গে।
শীঘ্র এসে মম প্রাণী মিল দেহ সঙ্গে।।
সহজে কি হইয়াছি এমত অস্থির।
নতু এসে মিল নতু লও মম শির।।
তোমার চিকুর ওষ্ঠ মম জয় ক্ষয়।
তব কৃপা বিনে মম নাহিক আশ্রয়।।
তব মুখ জ্যোতে হৃদে জ্বলয়ে অনল।
দরশন আশে সদা নয়ন সজল।।
ভাসিয়ে জ্বলিয়ে জল অনল মাঝার।
আশার আশায়ে কাল যেতেছে আমার।।
তোমার নিমিত্তে ত্যাজি কুটুম্ব স্বজন।
মনস্তাপে পন্থে বৈসে করিনু রোদন।।
প্রাণ পরিবর্তে প্রেম কৈরাছি কিনন।
বিচারি দেখহ দেহে তুমি প্রাণধন।।
মন প্রাণ তব ভাবে সদায় খেদিত।
বর্শক মনের প্রায় নয়ন রোদিত।।
নয়নেরি লক্ষে যাহা দেখিয়াছে মনে।
কেহ দেখে নাই তাহা ত্রিলক্ষ ভুবনে।।
যে অবধি মনে জন্মিয়াছে প্রেম ভাব।
নেত্র রক্ত সিন্ধুধারে ভাসনই লাভ।।
তব দ্বারে ধূল মূল্যে দিতে আছি প্রাণ।
দরশন আশে মরি কর কৃপা দান।।
আর কত কাঁদিবাম দ্বারোনভ্যন্তরে।
এবে খোলে দেও প্রাণ প্রিয়া আসি ঘরে।।
রূপের অরুণ তুমি আমি রেণু প্রায়।
তব জ্যোতি বিনে মম আছে কি উপায়।।
আমি তব ছায়া প্রায় তুমি মম কায়া।
তোমা ছেড়ে যাব কোথা না করিলে দয়া।।
মম পক্ষ অধে হবে এ সপ্ত গগন।
যখন হৈব প্রাপ্ত কিঞ্চিৎ দর্শন।।
ভুরু কাটারী আমাতে দিতেছি জীবন।
সঙ্গে সঙ্গে থেকে কত রহিবে গোপন।।
কন্যা বলে ছি-ছি একি বলিলা কথন।
বৃদ্ধকালে কে কৈরাছে প্রেম আলাপন।।
অন্তিম সময় তব অত্যন্ত অদূর।
মরু মনে কি বিকশে প্রেমের অঙ্কুর।।
সিদ্ধ বলে আর কিছু না করিয় ছল।
নয়নেরি কূপে মম নাই আর জল।।
প্রেমে বৃদ্ধ যুবা তুমি কি করিলে ভিন।
প্রেম ভিন্ন না করয়ে যুবা পরাচিন।।
কন্যা বলে হও যদি আমার প্রেমিক।
প্রেম ধর্মাচারে যদি হও তুমি ঠিক।।
মম নেত্র বাক্য তুমি করহ পালন।
তবে মম দর্শনাশা করিবে মনন।।
আদ্যে প্রেম ধর্ম নীতি মানি হেঁট শিরে।
প্রণিপাত কর গিয়ে প্রতিমা গোচরে।।
তারপরে জ্বালাইবে মহৎ কোরান।
তবে মম প্রেমে হবে তোমার প্রমাণ।।
সুরাপান করিবেক মানি প্রেমদেশ।
নতু নিজ পন্থ লও পরি নিজ বেশ।।
এক রঙ্গে না মজিলে দুইজন মন।
কদাচিৎ না হৈবে প্রেমের সাধন।।
দুই চিত্ত সংমিলনে প্রেমের সঞ্চয়।
মনে মনে অমিলনে পিরীতি টুটয়।।
সিদ্ধ বলে সুরাপান করিতে সম্মত।
কিন্তু না’রি করিবারে ঐ দুঅসতঃ।।
কন্যা বলে এসো এসো কর সুরাপান।
সুরাপান করিলে সে হৈব অজ্ঞান।।
তবে শীঘ্রে ধৈরে করে অতি সমাদরে।
কন্যায় আনিল তারে মন্দির মাঝারে।।
আদ্যে কৈরাছিল সিদ্ধ প্রেম মদপান।
সেই মদে আছিল সে অত্যন্ত অজ্ঞান।।
প্রিয়সীর সঙ্গে হৈয়ে অতি আনন্দিত।
মন্দির মাঝারে গিয়ে হৈল উপস্থিত।।
প্রিয়সীর হস্ত থাকি মদ বাটি লিয়া।
পান কৈল্য তাহে অতি হরষিত হৈয়া।।
হঠাৎ সে সুরাপান করিতেই মাত্র।
একগুণ প্রেম তার হৈল সহস্র।।
উন্মাদের প্রায় হৈয়ে অতি স্তব্ধ জ্ঞান।
আর এক সুরা বাটি করিল সে পান।।
লক্ষ লক্ষ ধর্মগ্রন্থে আছিল পণ্ডিত।
পানিতে সে সুরা বাটি হইল বিস্মৃত।।
ধর্মের সিদ্ধতা যত হইল হরণ।
কন্যা প্রেম ধর্মে হৈল এবে সিদ্ধ জন।।
সিদ্ধ প্রেমে সিন্ধু প্রায় হৈল তরঙ্গিত।
তরঙ্গ চক্রেতে তবে হৈয়ে নিমজ্জিত।।
মনে হৈল তার আলিঙ্গন আকিঞ্চন।
স্পর্শ করিতে কন্যা গর্জিয়া তখন।।
বলিল হে প্রেমের অপক্ক একি কর্ম।
প্রবঞ্চক প্রেম তব নাই তাতে মর্ম।।
প্রেমধর্ম বটে সর্ব ধর্ম আদি মূল।
কোন ধর্ম নহে ভবে প্রেম সমতুল।।
প্রেম নীতি না মানিলে প্রিয়ার কারণ।
সহজে কি প্রেম ধর্ম হইবে সাধন।।
সর্ব ধর্ম ত্যাজি প্রেম ধর্ম কল্যে ঠিক।
প্রেমিক নিকটে তবে হইবে প্রেমিক।।
সর্বধর্ম যে না ত্যাজে প্রেমের কারণ।
প্রেম ধর্মে নিশ্চয় সে কাপুরুষ জন।।
দুঃখে সুখে জয়ে ক্ষয়ে যে হয়ে ভাবিত।
প্রেম করা সেই জনে না হয়ে উচিত।।
নরকের ভয় কিবা স্বর্গের ভরসা।
কি রাখিবে হয়ে যেই প্রেমে আপ্তনাশা।।
প্রেম আর সুরাপানে সিদ্ধ হৈয়ে মত্ত।
না লিল এ বাক্য শুনি কিছু ধর্ম তত্ত্ব।।
বলিতে লাগিল এবে যাহা আজ্ঞা হয়।
সে আজ্ঞা পালিত মনে না করিব ভয়।।
যদি করি নাই জ্ঞানে ঐ দুই কর্ম।
কোরান জ্বালাব আর ত্যাজিব সুধর্ম।।
কন্যা বলে এবে তুমি মম উপযুক্ত।
প্রেমিক সমাজে হবে শুদ্ধ প্রেম ভক্ত।।
ইতি আদ্যে আছিলা অপক্ক প্রেম ধর্মে।
ধন্য তোমা একে হৈলা পক্ক প্রেম ধর্মে।।
সর্বত্রে হৈল চর্চা সিদ্ধ মহাজন।
স্বীয় ধর্ম ত্যাজি করে ঈসাই গ্রহণ।।
ঈসাই আছিল যত আসিয়ে সত্বর।
সমাজ সাজাল সবে মন্দির ভিতর।।
পৈতা এক বান্ধিলেক সিদ্ধের কণ্ঠায়।
ঈসাইল হৈল ধর্ম ত্যাজি হায় হায়।।
মূর্তিকে প্রণতি করি কোরান তখন।
জ্বালাই করিল ভস্ম প্রেমের কারণ।।
তবে সিদ্ধ বলে যদি থাকে অবশিষ্ট।
তাহাও করিব মনে না ভাবিব কষ্ট।।
প্রণিপাত করিয়াছি করি সুরাপান।
ভস্ম কালি করিয়াছি জ্বালাই কোরান।।
পঞ্চাশ বৎসর সেবা কাবার মাঝার।
করিয়াছি তোমার নিমিত্তে ছারখার।।
ধর্ম কর্ম যত ছিল কৈরাছি বিনাশ।
মনে করি মাত্র তব দরশন আশ।।
মকবুল অধীনে বলে প্রেমে এই মত।
কৈরাছে করিবে আর কত শত শত।।
প্রেমের অপক্ক বটে জ্ঞানের বিখ্যাত।
প্রেম শাস্ত্রে আদ্য পাঠ্য ত্যাজে ধর্ম জাত।।
এবে এসে মিল প্রাণকান্তা মম সঙ্গে।
আমা আলিঙ্গন কর প্রেমের তরঙ্গে।।
কন্যা বলে আমি ধনী তুহি হে দরিদ্র।
অক্ষম হৈবে দিতে আমা এক বস্ত্র।।
ধনীয়ে ধনীয়ে মেলা কাঙ্গালে কাঙ্গাল।
সমান না হৈলে প্রেমে ঘটয়ে জঞ্জাল।।
কিছুমাত্র ভিক্ষা লিয়ে লও নিজ পন্থ।
মম দরশনে কভু না হৈবে শান্ত।।
সিদ্ধ বলে হায় তুমি ভাল বাক্য পাল।
সকল লুটিয়া একি ঘটাও জঞ্জাল।।
অদ্য হৈতে এ অবধি প্রেমে কোন জন।
বলে নাই এইরূপ বাক্য কদাচন।।
ছোনাআন দেশে ছিল প্রসিদ্ধ
ছোনাআন দেশে ছিল প্রসিদ্ধ সুজন। পবিত্র কাবার ঘরে তাঁহার আসন।। কাবার ঘরেতে ছিল পঞ্চাশ বৎসর। চারি শত সাধু শিষ্য তার সহচর।। মুহাম্মদী ধর্মে ছিল অতি জ্ঞানবান। কেহ না আছিল তবে তাঁহার সমান।। সত্ত্বা গুণে কি কহিব কেমন নিপুণ। সাধুত্যা গুণেতে কিছু না আছিল উন।। একদা স্বপ্নেতে দেখে সেই জ্ঞানবান। কাবা বাহিরে এক মনোরম স্থান।। সেই […]