শিষ্যগণ না পাইয়ে সঙ্কট সন্ধান।
গুরুর কার্যেতে সব হৈল স্তব্ধ জ্ঞান।।
বিপাক রক্ষার হেতু হইয়ে বিকল।
বিবেচনা করিবারে মিলল সকল।।
এক এক এলো দিতে হিত উপদেশ।
বিপদে মুক্তির জন্য বুঝায়ে বিশেষ।।
কেহ বলে স্নান কর হৈয়াছ মলিন।
আর কভু না হৈবে পবিত্রতা হীন।।
সিদ্ধ বলে বক্ষ রক্তে কত শতবার।
করিনু সুস্নান এক নিমিষ মাঝার।।
কেহ বলে কোথা গেল তব জপ মালা।
তপ জপ এই সব কি মতে ত্যাজিলা।।
বলে জপ মালা আমি কি করিব আর।
কৈরাছি প্রিয়সী প্রেমে পৈতার যোগাড়।।
কেহ বলে চল যাই কাবার আলয়।
প্রভুর সমীপে করি সতত বিনয়।।
বলে রূপবতী যদি মিলে এই স্থানে।
নম্র শির হৈতেম তাঁহার সদনে।।
কেহ বলে মুছলমানী ত্যাজিয়ে এখন।
অধর্মতা কি কারণে করিলা গ্রহণ।।
বলে প্রেম তুল্য নাই কোনই সুধর্ম।
না জানয়ে প্রেমিক বিহীনে প্রেম মর্ম।।
কেহ বলে নারদে কৈরাছে তোমা ভ্রান্ত।
তেকারণে হারাইছ তুমি ধর্ম পন্থ।।
বলে এই ভ্রান্তি বটে শত ধর্ম ধিক।
সুধর্ম কুধর্ম ভিন্ন কি বুঝে প্রেমিক।।
কেহ বলে হৈবেক জগতে দুর্নাম।
দুর্নাম হৈবে কিসে হেন গুণধাম।।
বলে সুনাম কুনামে কিবা মোর চিন্তা।
এক চিন্তা মাত্র কোথা পাব প্রাণকান্তা।।
কেহ বলে তব কর্ম হেরি বিপরীত।
শিষ্যগণ যত মনে হৈয়াছে দুঃখিত।।
বলে যদি প্রাণকান্তা থাকে আনন্দিত।
কি চিন্তা জগৎ যদি হইল দুঃখিত।।
কেহ বলে আমা সঙ্গে চল পুনর্বার।
মনানন্দে যাই সব কাবার মাঝার।।
বলে কি করিব কাবা যে মন্দিরে মুগ্ধ।
সুরাপানে মত্ত পান না কর যে দুগ্ধ।।
কেহ বলে কাবা গিয়ে করহ মিনতি।
পাপ রক্ষা আর যেন বাড়য়ে বিদুতি।।
বলে প্রিয়সীর দ্বারে করিব বিনয়।
সদায় সর্বদা যেন বাড়য়ে প্রণয়।।
কেহ বলে এই কর্মে যায় নরকেতে।
বিখ্যাত হৈয়ে কিসে যাইবেক তাতে।।
বলে সপ্ত নরকের কি রাখিনু ভয়।
মম এক আহাদে সে সমস্ত নিবয়।।
কেহ বলে পুনর্বার স্বর্গের আশায়।
এই সব কর্ম ত্যাগ ছাড় পাপ দায়।।
বলে শত স্বর্গ ধিক প্রিয়সীর গলি।
সেই রম্য গলি থাকি কোথা যাব টলি।।
কেহ বলে পুনঃ ধর্ম করহ গ্রহণ।
পুনর্বার সাধ কর বিশ্বাস রতন।।
বলে যেইজন হয়ে প্রেমের উদাস।
সে জনে না জানে কভু কিমত বিশ্বাস।।
এইমত এক এক বুঝাল সকল।
কিন্তু কার উপদেশে না দর্শিল ফল।।
দুঃখিত হইয়ে শেষে সব শিষ্যগণ।
সকল মিলিয়ে কল্য কাবাতে গমন।।
কাবাতে আছিল এক শিষ্য মহাজন।
রুমেতে গমন সমে না ছিল তখন।।
উপস্থিত হৈল যবে এসব হতাশ।
সিদ্ধের অবস্থা যত করিল জিজ্ঞাস।।
একে একে যত ইতি হৈয়াছে বিতন।
তাহার সম্মুখে সব করিল বর্ণন।।
এই সব শুনি শিষ্য হৈয়ে দুঃখিত।
কাঁদিল অনেক মনে হৈয়ে খেদিত।।
বলিতে লাগিল তবে হই দুঃখময়।
ছাড়িয়া আসিলা কেন গুরু মহাশয়।।
বিপদ সময়ে কিসে হৈলা বিপরীত।
ভিন্নতা বিপাক সমে নহে প্রেম রীত।।
বন্ধুর পরীক্ষা হয় বিপদের কালে।
নতু কত বন্ধু মিলে সম কুতূহলে।।
গুরু মহাশয় যদি ত্যাজিলেক ধর্ম।
নিতান্ত উচিত শিষ্য করিতে সে কর্ম।।
গুরু থেকে যেই শিষ্য হয়ে ভিন্ন চিং।
সত্য শিষ্য সেই জন নহে কদাচিং।।
কলঙ্ক বিহীনে কভু নহে প্রেম ঠিক।
কলঙ্ক বিহীন জন না হয়ে প্রেমিক।।
কলঙ্কের হার বটে প্রেমিক ভূষণ।
প্রেমিকে না শোভে তাহা বিনে কদাচন।।
অপবাদ বটে সদা প্রেম ধর্ম মূল।
নতু বিকশিত নহে প্রেমের মুকুল।।
সবে বলে বুঝাইয়াছি কত এই মত।
থাকিতে তাহার সঙ্গে না হৈল সম্মত।।
আমাদের হিত বাক্যে না দর্শিল ফল।
কন্যা প্রেম সদা তাতে হৈল প্রবল।।
অবশেষে হৈয়ে সবে তাঁর আজ্ঞাধীন।
অপারগ্য আসিয়াছি করি তাহে ভিন।।
বলে তবে কিসে সবে মিলিয়া তখন।
না করিলে নিরাঞ্জন সমীপে রোদন।।
শুনিয়ে তাহার মুখে কথন উচিত।
হেঁট শির করি সবে রহিল লজ্জিত।।
তখন বলিল ঐ শিষ্য মহাজন।
চল করি পুনঃ সবে রুমেতে গমন।।
নির্জনে মিলিয়া সবে মুক্তির কারণ।
প্রভুর সমীপে নিত্য করিগো রোদন।।
এই বাক্য শুনি সব হই একাযুক্ত।
রুমেতে চলিল গুরু করিবারে মুক্ত।।
উপস্থিত হৈল যবে গিয়ে সেই স্থানে।
কাঁদিতে লাগিল সবে বসি অন্তর্দ্ধ্যানে।।
দিবস যামিনী ত্যাজি শয়ন ভোজন।
প্রভুর নিকটে সবে করয়ে রোদন।।
চল্লিশ দিবস রাত্রি অতি ভক্তি চিত্তে।
প্রভুর সমীপে রৈল সদা সমাধিতে।
এরূপে কাঁদিয়ে সবে হৈয়ে অন্তর্দ্ধ্যান।
চল্লিশ দিবস যবে হৈল অবসান।।
গগণ উপরে যত ছিল দেব দল।
সিদ্ধ মুক্তি হেতু সবে করে কোলাহল।।
শিষ্যগণ অভ্যন্তরে উত্তম যে জন।
তাহার আশিস প্রভু করিল শ্রবণ।।
বহিল তাহার চিত্তে কৃপার সমীর।
অতি পুলকিত হৈল তাহার শরীর।।
প্রসন্নতা ভব হৈল চিত্তে প্রকাশিত।
নবীর নির্মল চিত্র হেরি বিরাজিত।।
চিকুর আচ্ছন্ন জনে অরুণ বদন।
চৌদিগে করয়ে যেন জ্যোতি বিতরণ।।
ধীরে ধীরে মৃদু হেসে করে আগমন।
মৃত দেহে যেন দান করয়ে জীবন।।
দরশন পেয়ে অতি আহলাদিত মনে।
বিনতি করয়ে ত্বরা নবীজির পানে।।
ওহে মম প্রভু সখা করুণা ভাণ্ডার।
তব অল্প কৃপা দৃষ্টি জগৎ উদ্ধার।।
দয়াময় গুরু আমাদের ধর্ম কান্ত।
পন্থ ভ্রম হৈয়ে আমা কৈরাছে অশান্ত।।
তুমি গুরুগণ গুরুধর্ম অধিকার।
ভ্রান্ত নিরাশ্রয়ে দৃষ্টি কর একবার।।
কৃপায়ে দেখায়ে আমা সুরক্ষা প্রকট।
দেখাও এ ভ্রান্তি চক্র হৈতে রক্ষা তট।।
নবীজিয়ে বলে রেখে ছিল সে গোপনে।
ধূলী প্রায় কিছুমাত্র হৃদয় দর্পণে।।
তোমার আশিস প্রভু করিয়া শ্রবণ।
তাহারে কৈরাছে আজু নির্মল দর্পণ।।
মুকুর হৈতে ধূলী হৈল নির্মল।
মুক্তি মুখ দেখা যাবে এখন উজ্জ্বল।।
প্রভুর সমীপে যেবা কাঁদায়ে সন্তাপে।
সেইজন কভু মুগ্ধ না রহিবে পাপে।।
দোষ পরে যে করিবে কিঞ্চিৎ রোদন।
কোটি কোটি পাপে তার হইবে মোচন।।
এইরূপ দুই চারি সুরস কথন।
বলিয়ে হৈল নবী তখন গোপন।।
নবীজির মুখে শুনি এসব কথন।
বাহিরে কুন্দিল অতি হরষিত মন।।
মিত্রগণ সঙ্গে লিয়ে করি অবগম।
অবিলম্বে রুম দিগে করিল সঙ্গম।।
বিচলিত গিয়ে যবে হৈল উপস্থিত।
গুরু সুদর্শনে যবে হৈল হরষিত।।
দেখিল কন্যার প্রেম করিয়ে বর্জন।
প্রভুর সমীপে সদা করয়ে রোদন।।
শিষ্যগণে দেখি গুরু অতি পুলকিত।
হৃদ জ্যোতি তরঙ্গেতে হৈল নিমজ্জিত।।
নিজ কর্ম লজ্জা হেতু হৈয়ে কাতর।
বিনীত করয়ে সদা প্রভুর গোচর।।
জ্যোতি দীপ্তি পুনঃ হৃদে হৈল প্রজ্বলিত।
হারা বিজ্ঞানাদি যত হৈল জ্ঞাপিত।।
স্মরণ হৈল যত ছিল বিস্মরণ।
তিমিরতা ছুটি হৈল প্রসন্ন ভুবন।।
অধর্ম ত্যজিয়ে হৈল ধর্মের গ্রাহক।
মূর্তি ভৃত্য হৈল পুনঃ প্রভুর সেবক।।
তরঙ্গিত হৈল প্রভু করুণা সাগর।
নবী সুদৃষ্টিয়ে পেল পুনঃ ধর্মবর।।
বলিতে লাগিল তবে যত শিষ্যগণ।
সুখের সময়ে কিসে করহ রোদন।।
প্রভুর প্রণাম যিনি তম সিন্ধু ধারে।
দীপ্তিমান ধর্ম রক্ষা প্রকাশিত করে।।
অন্ধকারে পাবে যিনি করিতে প্রসন্ন।
লক্ষ লক্ষ পাপ পারে করিতে সে পুণ্য।।
শিষ্যগণ সঙ্গে করি প্রসিদ্ধ সুজন।
পুনঃ পবিত্র কাবাতে করিল গমন।।
শিষ্যগণ না পাইয়ে সঙ্কট সন্ধান
শিষ্যগণ না পাইয়ে সঙ্কট সন্ধান। গুরুর কার্যেতে সব হৈল স্তব্ধ জ্ঞান।। বিপাক রক্ষার হেতু হইয়ে বিকল। বিবেচনা করিবারে মিলল সকল।। এক এক এলো দিতে হিত উপদেশ। বিপদে মুক্তির জন্য বুঝায়ে বিশেষ।। কেহ বলে স্নান কর হৈয়াছ মলিন। আর কভু না হৈবে পবিত্রতা হীন।। সিদ্ধ বলে বক্ষ রক্তে কত শতবার। করিনু সুস্নান এক নিমিষ মাঝার।। কেহ […]