পুণ্য রবি ভাগ্যাকাশে যাহার উদয়

পুণ্য রবি ভাগ্যাকাশে যাহার উদয়। আদ্য প্রীতি গুণে তারে করয়ে আশ্রয়।। তবে প্রভু কৃপা গুণে মনেতে তাহার। হৈবে করিতে আপ্ত কার্যের বিচার।। নিজ কার্যে দৃষ্টিপাত করিয়া তখন। নিরীক্ষিয়া আপ্ত কর্ম পাপের লক্ষণ।। নিরাঞ্জন ত্রাসে মনে হয়ে চঞ্চলিত। পাপ হৈতে রক্ষা জন্য সদায় চিন্তিত।। কি করিবে কোথা যাবে না পায়ে উদ্দেশ। সদা চিন্তাময় কি হৈবে অবশেষ।। […]

পুণ্য রবি ভাগ্যাকাশে যাহার উদয়।
আদ্য প্রীতি গুণে তারে করয়ে আশ্রয়।।
তবে প্রভু কৃপা গুণে মনেতে তাহার।
হৈবে করিতে আপ্ত কার্যের বিচার।।
নিজ কার্যে দৃষ্টিপাত করিয়া তখন।
নিরীক্ষিয়া আপ্ত কর্ম পাপের লক্ষণ।।
নিরাঞ্জন ত্রাসে মনে হয়ে চঞ্চলিত।
পাপ হৈতে রক্ষা জন্য সদায় চিন্তিত।।
কি করিবে কোথা যাবে না পায়ে উদ্দেশ।
সদা চিন্তাময় কি হৈবে অবশেষ।।
চিন্তাময় হৈয়ে আত্মা তখন তাহার।
পাপ হৈতে রক্ষা হেতু ভাবে অনিবার।।
তবে জ্ঞান আত্মা তার হৈয়ে জাগরিত।
অলস্যের নিদ্রা থাকি হৈয়ে সচকিত।।
প্রসিদ্ধ গুরুর তত্ত্বে করে উচাটন।
পাপ হৈতে মুক্তি লাভে সঞ্চায়ে কারণ।।
তবে দিবা নিশি ত্যাজি শয়ন ভোজন।
স্বগুণ গুরুর তত্ত্বে বিচলিত মন।।
উদ্যানে সুপুস্প ঘ্রাণে ভ্রমর যেমন।
নানা দিগে উদাসীত করয়ে ভ্রমণ।।
তবে প্রভু কৃপা কোন প্রসিদ্ধ নিকট।
নিয়ে তার মুক্তি পন্থ দেখায়ে প্রকট।।
অন্ধের নয়ন গুরু মৃতব জীবন।
গুরুর চরণ ধূলী নয়ন আঞ্জন।।
হৃদয় ভুবন বটে যেন তম নিশি।
প্রসিদ্ধ গুরুর আশ্র যেন পূর্ণ শশী।।
এ ভব জীবন বটে নিশির তুলন।
পরকাল দিন যেন অরুণ মতন।।
জীবন্তে লুকিত থাকে যত পাপ পুণ্য।
কার কিবা পাপ পুণ্য না জানয়ে অন্য।।
প্রলয়ের প্রভারুণ উদিবে যখন।
পাপ পুণ্য যত প্রকাশিবে সেইক্ষণ।।
প্রলয় আরম্ভ বটে অন্তিম সময়।
পাপ পুণ্য মৃত্যু কালে প্রকাশে নিশ্চয়।।
নিশিতে প্রাভাত অগ্রে ইচ্ছে যেইজনে।
নিরীক্ষিতে গৃহ দ্রব্য আদি স্ব-নয়নে।।
প্রদীপ জ্বালন তার হৈবে উচিত।
ঘরের সামগ্রী তবে হবে প্রকাশিত।।
মৃত্যু আদ্যে মৃত্যু ইচ্ছা করে যেই জনে।
প্রেম প্রলয়ের লক্ষে দেখিতে আপনে।।
এ জীবন রাত্রে তার উচিত নিশ্চয়।
করিতে গুরুর দীপে হৃদ জ্যোতিময়।।
গুরু ভক্তি এই পন্থে যে লিল সম্বল।
ধর্ম দীপ হৃদ গৃহে হৈল উজ্জ্বল।।
গুরু আজ্ঞা কি নিষেধ মাত্র ধর্ম মূল।
গুরু আজ্ঞা পালে যেই সাধয়ে দু’কূল।।
নিরাঞ্জন শ্রেষ্ট নাম গুরু মহাজন।
হৃদ অন্ধ জন লাগি যষ্টির মতন।।
যষ্টি না থাকিলে অন্ধে না পাইবে পন্থ।
গুরু বিনে শিষ্য না পাইবে আপ্ত অন্ত।।
গুরু ভক্তি মাত্র প্রভু নামের সাধন।
গুরু সংশ্রবণে মিলে প্রভুর দর্শন।।
যার গুরু নাই তার গুরু পাপ কর্তা।
গুরু বটে দুই কূলে মাত্র পাপ হর্তা।।
মনের উদ্যানে মাত্র গুরু মনোহর।
সেই মনোহর বিনে কোথা পাবে বর।।
সেই মনোহর ভবে কিমিয়ার বটি।
তার সুদৃষ্টিয়ে হয়ে স্বর্ণ মাটি ঘটি।।
মনোহর গুরু যদি মিলে ভাগ্যগুণে।
না ছাড়িবে এ জীবন্তে গেলে প্রাণ ধনে।।
নিরাকার সনে এই আঁকার পিরীত।
অনলের প্রীতি যেন জলের সহিত।।
তেকারণে নিরাঞ্জনে তোষি নিজ মর্মে।
করিল দর্শন হেতু গুরুকে সুধর্মে।।
সর্ব ছত্রী পরে পড়ে রবির কিরণ।
কিন্তু সে কিরণে ছত্রী না জ্বলে কখন।।
অগ্নি সিসা লক্ষে যদি পড়িল কিরণ।
অবিলম্বে জ্বলি যায়ে ছত্রী সেইক্ষণ।।
প্রভু দৃষ্টি সর্ব স্থানে বটে সর্বময়।
গুরু লক্ষ বিনে কিন্তু না হৈবে জয়।।
নিরাঞ্জন মর্ম ভেদ গুরুর আঁকার।
গুরু বিনে তার মর্ম না হবে সুসার।।
নিরাঞ্জন উপাসনা বটে গুরু ভক্তি।
গুরু ভক্তিয়ে পায় দুই কূলে মুক্তি।।
যত ভক্তি তত মুক্তি গুণীগণ বাণী।
গুরুর ভক্তিয়ে হয়ে সর্ব শিরোমণি।।
গুরু ভক্তি বটে সর্ব উপাসনা মূল।
শত অব্দ পূজা তার নহে সমতুল।।
আপ্ত গুরু যেই মূঢ় জনে ভাবে ভিন।
সেই কভু না পাইবে নিরাঞ্জন চিন।।
ভবসিন্ধু পার হেতু গুরু মাত্র তরী।
ত্বরে গুরুপদ তরী ধর যেতে ত্বরি।।
গুরু বটে এই ভবে দু’নয়ন তারা।
গুরু ধন মাত্র এই জীবনের সারা।।
লক্ষ সাল পূজা যদি করে কোন জন।
গুরু বিনে না পাইবে প্রভুর দর্শন।।

লেখক: আবদুল গণি কাঞ্চনপুরী

error:

পুণ্য রবি ভাগ্যাকাশে যাহার উদয়